সফল কর্মী সফল ছাত্র: মাওলানা লিয়াকত আলী

ছাত্রকাল হলো মানুষের জীবন গঠনের সময়। তারুণ্য এবং যুবা বয়সের সিদ্ধান্তই ব্যক্তিকে পরবর্তী জীবনের দিক নির্দেশ করে। মানুষ বড় হয় ছোট থেকেই। মানুষ বড় রাজনীতিবিদ হয়েছে ছাত্র জামানার পরিশ্রমের ফলেই। ছাত্র সময়ে যে যে ধরনের মেহনত করবে পরবর্তীতে সে সেই বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠবে। যৌবনকাল তো হচ্ছে উদ্যমতা আর মুখরতার সময়। বরং ছাত্র সময়ই হচ্ছে কাজ করার সময়। কারণ তারুণ্যের এই সময়েই অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। একজন ভাল মানের কর্মী পরবর্তীতে একজন ভালো রাজনীতিবিদ হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই একজন কর্মীকে ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে।
দলীয় আনুগত্য করে চলা: সংগঠন তো এটাই চায় যে, তার প্রত্যেকটা জনশক্তি যোগ্য এবং প্রশিক্ষিত, নিবেদিতপ্রাণ হয়ে গড়ে উঠুক। এটাই থাকে একটা সত্যিকারের সংগঠনের চাওয়া। অতএব সংগঠন যখন যেভাবে বলে সেভাবেই সংগঠনের আনুগত্য কওে চলা। কারণ দলীয় আনুগত্য ছাড়া কোন সংগঠনেই স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। সাংগঠনিক স্থিতিশীলতাই প্রতিটি সংগঠনের প্রভাব বৃদ্ধি করতে পারে।
দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলা: প্রত্যেকটা সংগঠন সংস্থারই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা থাকে। সেই নিয়ম শৃঙ্খলা মেনেই তার সদস্য কর্মীদের চলতে হয়। এই নিয়ম শৃংখলার উপরই সংগঠনের কাজের উন্নতি-অগ্রগতি নির্ভও করে। এই নিয়ম শৃঙ্খলা যতটুকুই মেনে চলা হবে একটা সংগঠন ততটাই গতিশীল এবং মজবুত হবে। অতএব একজন কাঙ্খিত মানের কর্মীর অবশ্যই সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা জরুরি। সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলা মানার দ্বারা সে সংগঠন থেকে যেমন উপকৃত হতে পারবে, তেমনিভাবে সংগঠনও জাতির আশা ভরসার স্থানে যেতে পারবে।
নিজেকে গঠন করা: একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর জন্য এটা একটা আবশ্যকীয় কর্তব্য যে, সর্বপ্রথম তার নিজের আত্মগঠনের প্রতি মনোযোগী হওয়া। একজন কর্মী যত বেশি যোগ্যতা দক্ষতা অর্জন করতে পারবে বাস্তব জীবনে দেশ, জাতি, সমাজ তার থেকে তত বেশি উপকৃত হবে। নিজের ব্যক্তি গঠনের প্রতি মনোযোগী না হয়ে শুধু আবেগতাড়িত হয়ে কোন কিছু করতে গেলে পাছে নিজেকেই এর মাশুল গুনতে হবে। শুধু ত্যাগ-কুরবানী দিয়ে বড় কিছু হয় না, ত্যাগ-কুরবানী ও যোগ্যতার সমন্বয় প্রয়োজন। নিজেকে গঠন করতে কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।
(ক) ব্যক্তি গঠন বলতে প্রথমেই প্রত্যেকটা জনশক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভালোভাবে পড়াশোনা করা ছাড়া ভালো নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব না। যেমন পবিত্র কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে- “ফায়াবসুতুল ইলম” তথা জ্ঞান-যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে।
(খ) পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতিও মেনে চলতে হবে। আদব-কায়দা ব্যবহার-আচরণে সভ্য-ভদ্র হতে হবে।
(গ) শিক্ষকবৃন্দের সাথে সর্বদা সদাচারণ বজায় রাখতে হবে। সমাজের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে, যারা সংগঠন-আন্দোলন করে তারা বেয়াদব হয়! এই ধারণার শৃঙ্খল আমাদের ভাঙতে হবে। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান এবং মর্যাদার ব্যাপারে সজাগ-সচেতন থাকতে হবে।
দাওয়াতী মেজায গঠন করা: স্বপ্নবান যুবা এবং তরুণ সমাজের আরেকটি কাজ হবে, তারা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজেও শরিক হবে। এতে করে একে তো মানুষের মেযাজ বোঝা যায়, পাশাপাশি তাদের কাকে কিভাবে দাওয়াত দিতে হবে সেই বুঝ এবং চর্চাটাও শিক্ষা হয়ে যায়। ফলে সাংগঠনিক জীবনে দাওয়াতী কাজের বেশ সুবিধা হয়। ফলপ্রসূ দাওয়াতী কাজ করা যায়। কারণ আপনাকে জানতে হবে কাকে দাওয়াত দিচ্ছেন। তার চাহিদা কী। সে অনুযায়ী আপনার দাওয়াত পৌছাতে হবে।
তা’আল্লুক মাআল্লাহ করতে হবে: ইসলামী আন্দোলনের বিপদ সংকুল এবং কণ্টকাকীর্ণ এই পথে জাহিরী বাধা-বিপত্তির সাথে সাথে একটা সময় আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে বিভিন্ন লোভ-প্রলোভনও দেখানো হয়। নানা ধরনের লাল-নীল রঙিন স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশ্বাসও দেওয়া হয়। এজন্য চাই দৃঢ়চেতা, আত্মবিশ্বাসী এবং আস্থাবান নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে তাকওয়া, পরহেজগারি আর আত্মশুদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আর সেজন্য কোন হক্কানী আল্লাহ-ওয়ালা বুজুর্গানেদ্বীনের সাথে ইসলাহী তা’আল্লুক রাখাটাও জরুরি। এতে করে,
প্রথমত, অন্তরের ভেতর ইখলাস তৈরি হয়, যেটা মূলত ইসলামী আন্দোলনের প্রাণশক্তি।
দ্বিতীয়ত, ইসলাহী এই তা’আল্লুকের ফলে দিলের মাঝে অভাবনীয় রুহানি শক্তি পয়দা হয়।
তৃতীয়ত, আল্লাহুওয়ালা, পীর-বুযূর্গ তাদের দোয়া পাওয়া যায়।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার বাইরে আরো ব্যাপক পরিসরে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করাটা বেশি জরুরি। এরমধ্যে বিশেষত ইসলামিক পৌরনীতি, পররাষ্ট্র নীতি এবং আধুনিক বিশ্বেও রাজনীতি নিয়েও পড়তে হবে। এক্ষেত্রে শাহ ওয়ালী উল্লাহর রাজনৈতিক দর্শন পড়া যেতে পারে। মোটকথা, ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেকটা কর্মীকে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, ইসলামিক অর্থনীতির স্বরূপ ইত্যাদি সকল শাখা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা এবং জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

যে ছাত্ররা দ্বীনের জন্য সংঘবদ্ধ, আল্লাহর যমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে যারা সংগঠনে সময় দিচ্ছে তারা যদি এই বিষয়গুলো মেনে চলে এবং এই বিষয়গুলো তাদের জীবনে ধারণ করতে পারে তবে অবশ্যই তারা সফল কর্মী সর্বোপরি সফল মানুষরূপে নিজেদের গঠন করতে পারবে।

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন

যোগদিন আমাদের সাথে

ইসলামের মূল তিন কাজ- তা’লীমে দ্বীন (দ্বীনের শিক্ষা), তাবলীগে দ্বীন (দ্বীনের দাওয়াত) ও তাগলীবে দ্বীন (দ্বীনের বিজয়) এর সমন্বয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য পাঁচ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১. দাওয়াত, ২. সংগঠন, ৩. প্রশিক্ষণ, ৪. সমাজকল্যাণ, ৫. আন্দোলন। আমি বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ঘোষিত কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এ সংগঠনে যোগদান করছি।

Scroll to Top