২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ সরকারের উপস্থাপিত ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট (মোট আকার: ৭,৯০,০০০ কোটি টাকা) অর্থনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কালকে সামনে রেখে প্রণীত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনমান, এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে এই বাজেটের কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও বেশ কিছু বিষয় আমাদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
ইতিবাচক দিকসমূহ:
১. সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি
• বরাদ্দ: ১,৪৪,৭৫২ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ১৮.৩২%)
• গরিব, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের জন্য ভাতা ও সহায়তা প্রসারিত হওয়া সামাজিক ন্যায়ের লক্ষ্যে একটি অগ্রগতি।
২. স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় আংশিক অগ্রাধিকার
• শিক্ষা খাতে বরাদ্দ প্রায় ৯৪,৭১৩ কোটি টাকা।
• স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৪২,৩১২ কোটি টাকা।
• স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের প্রয়োজন থাকলেও, এই বরাদ্দ আংশিক ইতিবাচক।
৩. প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্য বাস্তবসম্মত
• ৫.৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও ৬.৫% মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করাটা সচেতন ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় মানানসই।
সমালোচনামূলক দিকসমূহ:
১. রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অতিরঞ্জিত ও বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন
• এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা: ৪,৯৯,০০০ কোটি টাকা
• গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি ধরা হয়েছে, অথচ বাস্তবে এনবিআর এখনও আগের বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ। এই ফাঁকা লক্ষ্যমাত্রা বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করে।
২. সুদভিত্তিক ঋণের উচ্চ নির্ভরতা ও ঋণচক্রের ঝুঁকি
• বাজেট ঘাটতি: ২,২৬,০০০ কোটি টাকা
• এর মধ্যে ১,২৫,০০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং ১,০১,০০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে।
• এই উচ্চ ঋণনির্ভরতা ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধের চাপে জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের ঝুঁকি তৈরি করে।
৩. শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত জোর নেই
• বরাদ্দ বাড়ানো হলেও কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুপস্থিত।
• শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা, ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে ঘাটতি রয়ে গেছে।
৪. যুব কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপের অভাব
• বাজেটে প্রায় ৪৫ লাখ বেকার তরুণের জন্য বাস্তবমুখী কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেই।
• স্টার্টআপ, স্কিল ট্রেনিং, কিংবা উদ্যোক্তা উন্নয়নে বরাদ্দ ও পরিকল্পনা অত্যন্ত সীমিত।
৫. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ অনুপস্থিত
• বাজেট মূল্যস্ফীতি ৬.৫% লক্ষ্যমাত্রা দিলেও চাল, ডাল, তেল, ওষুধ–এইসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কোনো স্পষ্ট প্রস্তাব নেই।
• গণপরিবহন, গ্যাস-বিদ্যুতের দামও নিয়ন্ত্রণহীন রয়েছে।
আমাদের প্রস্তাবনা:
১. রাজস্ব আহরণে বাস্তবভিত্তিক, প্রগতিশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা নিতে হবে।
২. শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য আলাদা যুব ফান্ড এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্র্যাক চালু করা জরুরি।
৩. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক ভর্তুকি ও বাজার নজরদারি জোরদার করতে হবে।
৪. দেশি উৎপাদনে ভর্তুকি দিয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানো উচিত।
এই বাজেট ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, তরুণ সমাজ ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি অনুপস্থিত। বাজেট শুধু পরিসংখ্যানের বিষয় নয়—এটি জনগণের প্রত্যাশা ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের নীতিমালা। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট মহল বাজেট বাস্তবায়নে জনগণের স্বার্থ, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
বার্তা প্রেরক
মুশতাক আহমাদ
কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক
বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন

যোগদিন আমাদের সাথে

ইসলামের মূল তিন কাজ- তা’লীমে দ্বীন (দ্বীনের শিক্ষা), তাবলীগে দ্বীন (দ্বীনের দাওয়াত) ও তাগলীবে দ্বীন (দ্বীনের বিজয়) এর সমন্বয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য পাঁচ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১. দাওয়াত, ২. সংগঠন, ৩. প্রশিক্ষণ, ৪. সমাজকল্যাণ, ৫. আন্দোলন। আমি বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ঘোষিত কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এ সংগঠনে যোগদান করছি।

Scroll to Top