ছাত্র সংগঠন নিয়ে হাফেজ্জী হুজুরের বক্তব্যটি বর্তমান সময়ের জন্য নয়: আমীরে শরিয়ত শাহ আতাউল্লাহ দা.বা.

শাহ আতাউল্লাহ দা.বা.। হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর সাহেবজাদা। খেলাফত আন্দোলনের আমির। জীবনের বহুটা সময় কাটিয়েছেন ইসলামী রাজনীতি ও আন্দোলনে। সেই হাফেজ্জী দিয়ে শুরু করে হেফাযত পর্যন্ত। আন্দোলনের পরিণামে কারাবরণ করেছেন স্বমহিমায়। দেখেছেন অতিকাছ থেকে ইসলামী আন্দোলনের রূপবসন্ত, দু:খভরা আষাঢ়। অভিজ্ঞতার জাম্বিলও বেশ ভারি। তাঁর জীবন সায়াহ্নে এসে সেই উত্থান পতন ভাঙ্গা গড়ার সুদিন দুর্দিনের বেশ কিছু কথা ওঠে এসেছে কথায় কথায়। আজকের এই কথামালা যা আগামী দিনের পথিকদের পথ দেখাবে। আত-তাগলীবের পক্ষ থেকে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন জাহিদুজ্জামান আল আবিদ শাকির

১. আপনার অতীত নিয়ে জানতে খুব ইচ্ছে করছে। সংগঠন করেন কখন থেকে? শুরুতে কোন সংগঠন করতেন?
আসলে শুরুর দিকে আলাদা কোন ছাত্র সংগঠনে ছিলাম না। আব্বাজান হাফেজ্জি হুজুর রহ. এর ডাকে মাদরাসার ছাত্ররা সকলেই ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করত। সে হিসেবে আমরাও করতাম। আমাদের বড় ভাই শাহ হামিদুল্লাহ সাহেব খেলাফত আন্দোলনের দায়িত্বে ছিলেন। আমরা সাধারণ কর্মী হিসেবে অংশগ্রহণ করতাম। এরশাদ সরকারের বিরূদ্ধে আন্দোলনের সময় জেলে যাওয়ারও সুযোগ হয়। চার মাস জেলে বন্দী ছিলাম। সে সময় হাফেজ্জী হুজুরের সন্তান হিসেবে শারীরিক অত্যাচারের তুলনায় মানসিক নির্যাতন বেশি সহ্য করতে হয়।

২. ছাত্রসংগঠন স¤পর্কে সমাজে নেতিবাচক একটি মনোভাব দেখা যায়। আপনি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
এ ব্যাপারে মনে পড়ে আব্বাজান রহ. এর কাছে যখন অধ্যাপক আখতার ফারুক রহ.সহ অনেকে ছাত্র সংগঠনের প্রস্তাব দিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, ছাত্র সংগঠনের কিছু নিয়মনীতি থাকে আর মাদরাসারও নিয়মনীতি আছে। উভয় নিয়মনীতি, কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় কঠিন। আর ছাত্ররা দেখা যাবে অনেক সময় মাদরাসার নিয়মের চেয়ে সংগঠনের নিয়মকে বেশি প্রাধান্য দেবে। এর দ্বারা উস্তাদদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের সম্ভাবনা থাকে। আর মাদরাসার ছাত্রদের পূর্ণ সফলতা নির্ভর করে উস্তাদদের নিয়মের কাছে নিজেদের পরিপূর্ণ সমর্পণের মধ্যেই। তাই হযরতের পরামর্শ ছিল ছাত্ররা উস্তাদদের তত্ত্বাবধানে সরাসরি আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুক। তবে যেহেতু স্কুল কলেজে সঠিক ইসলামি আন্দোলন করার সুযোগ নেই তাই আলেমদের সাথে তাদের সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য সেখানে ইসলামী ছাত্র সংগঠন হতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে এ কথা প্রযোজ্য নয়। কারণ এখন সহীহধারার পাশাপাশি বাতিল ধারার সংগঠনও বিদ্যমান। তাই ছাত্রদের সহীহ ধারায় ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের তত্ত্বাবধানে ছাত্র সংগঠন করাটা অনেকটা প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি। আর সে সময় সবাই এক পতাকাতলে ছিল। তাই আলাদা ছাত্র সংগঠন করার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিবেশে পরিবর্তন হয়েছে। পরিবেশের ভিন্নতার কারণে যেহেতু শরীয়তের হুকুমও পরিবর্তন হতে পারে তাই হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর কথাও বর্তমান সময়ে এভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

৩. আপনার এই যে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, বহু ভাঙ্গা-গড়ার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত এবং আজ এতোদূর আসা। এই পর্যায়ে এসে কি মনে করছেন ইসলামি আন্দোলন নিয়ে যে স্বপ্ন আপনি দেখেছিলেন, সেটা পূরণ হয়েছে বা কতোটুকু পূরণ করতে পেরেছেন?
আব্বাজান রহ. বলতেন, আমি ক্ষমতা দখলের জন্য আসিনি। এ ময়দানে আমি নিজ ইচ্ছায় আসিনি আমাকে নামানো হয়েছে। আর আমার মূল লক্ষ্য হল, ইসলামী জাগরণ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশে তো ইসলামী জাগরণ তৈরি হয়েছে। কারণ এ দেশে একটা সময় এমন গিয়েছে যখন রাজনীতির ময়দানে ইসলামের নাম নিয়ে কোন কিছু করা অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু হাফেজ্জি হুজুর রহ. এর নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার কারণে তা সহজ হয়েছে। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য এখনও অর্জিত হয়নি। এর জন্য আমাদের আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্য হলে তা অর্জন সম্ভব বলে আমার মনে হয়। আর আকাবিরদের মাঝে যে ভিন্নমতের সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। তাদের মাঝে ইখতেলাফ হলেও আন্তরিকতা ছিল।

৪. ঐক্যের ব্যাপারে যুব ও তরুণ সমাজের কি ভূমিকা হতে পারে বলে মনে করেন?
নিজেদের কর্মীদেরকে সংঘবদ্ধ করে সহীহ ধারার সংগঠনগুলোকে উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর এর জন্য তাদের মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে হৃদ্যতা তৈরি হবে।

৫. দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সর্বত্র ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে জঙ্গিবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। এটা কিভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব?
এ ধরনের অপবাদ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে।

৬. ইসলামি দল হিসেবে ইসলামি যে ইস্যুগুলো আছে যেমন অর্থনীতি, জাকাতব্যবস্থা, গ্রামীণ উন্নয়ন, এসব বিষয়ে আন্দোলন দেখা যাচ্ছে না কেন ?
এজন্য প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন, আর আমাদের এ দিকগুলো বেশি মজবুত না। এ বিষয়ে পরিকল্পনারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে।

৭. আমাদের ছাত্রসমাজের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
মুরুব্বীদের অনুগত থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের মানসিকতা তৈরির জন্য এ ময়দানে ভূমিকা রাখার সুযোগ আসলে তা যথাযথভাবে পালন করবে। তাহলে এ সিলসিলার আকাবীরদের রূহানী ফয়জ ও বরকত তারা লাভ করবে।

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন

যোগদিন আমাদের সাথে

ইসলামের মূল তিন কাজ- তা’লীমে দ্বীন (দ্বীনের শিক্ষা), তাবলীগে দ্বীন (দ্বীনের দাওয়াত) ও তাগলীবে দ্বীন (দ্বীনের বিজয়) এর সমন্বয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য পাঁচ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১. দাওয়াত, ২. সংগঠন, ৩. প্রশিক্ষণ, ৪. সমাজকল্যাণ, ৫. আন্দোলন। আমি বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ঘোষিত কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এ সংগঠনে যোগদান করছি।

Scroll to Top