…উনি চাচ্ছেন আমার কি হবে এটা পরে; আগে আপনারা বের হোন: মাওলানা ইলিয়াস হামিদী

 

সহজ সরল আর নির্লোভ চরিত্রের জীবন্ত উদাহরণ মাওলানা ইলিয়াস হামিদী। একাধারে খতিব, রাজনীতিবিদ। আল্লামা বাবুনগরী রহ.-এর হাতেগোনা খলিফাদের অন্যতম তিনি। এই সহজ সরল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেটেছে কারাগারে। কারাগারের সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা জানতে এক সুন্দর দুপুরে খেলাফত ছাত্র মজলিসের পক্ষ থেকে হাজির হয়েছিল সাইফুল্লাহ সাজিদ ও তানভির আহমাদ। সেই স্মৃতিচারণের লেখ্যরূপ দিয়েছে আশরাফুল ইসলাম সাদ ও এহসান সাজিদ।

স্মারক: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
হামিদী: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

স্মারক: শুরুতেই আপনার শারীরিক অবস্থাটা… এখন কেমন আছেন?
হামিদী: আলহামদুলিল্লাহ, অনেকটা সুস্থ আছি। ভালো আছি।

স্মারক: যতটুকু জানি, রিসোর্টের ঘটনার কয়েকদিন পরই হাটহাজারী থেকে আসার পথে আপনাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়… গ্রেফতারের পেক্ষাপটটা কী ছিল?

হামিদী: আসলে সবটা তো বলতে পারব না… খিলগাঁও মামজানুল উলুমে একটি মিটিং হয়ে ছিল। সেখানে আলোচনা হলো, হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলেম উলামারা সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। সেখানে কে কে যাবে একটি লিস্ট হলো। সেটাতে আমার নামও ছিল। তো সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামিয়া ইউনুছিয়া যাই। মাওলানা ফয়সাল ও ছিলেন আমার সাথে। সেখানে গিয়ে দেখলাম জুনায়েদ আল হাবীব সাহেবসহ অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন। মাওলানা সাজিদুর রহমান সাহেব (বর্তমান হেফাজতের মহাসচিব) তার উপরে জিম্মাদারী ছিল ক্ষতি সকল পরিবারকে ইনভাইট করার। তিনি সেভাবেই করেছেন। সকল পরিবার থেকেই অভিভাবকরা এসেছেন। আমরা তাদের সান্ত্বনা দিয়ে, সহমর্মিতা জানিয়ে কিছু অর্থ সাহায্য ও মহানগরের পক্ষ থেকে প্রদান করি। প্রায় পঞ্চান্ন হাজার টাকা দেয়া হয় ষোলো-সতেরটি পরিবারকে। এটা পরিপূর্ণই উলামায়ে কেরামের টাকা। কেউ দশ হাজার কেউ পাঁচ হাজার, এভাবে যে এমাউন্ট হয়েছে সেটাই আমরা সবার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। বাইরে থেকে কোনো অনুদান আসেনি। আর সংগঠনের তো কোনো ফান্ডও নেই।

সেখান থেকে পরের দিন আমরা গেলাম চট্টগ্রাম আসার পথে নারায়নগঞ্জ মদনপুর রোডে দেখলাম অনেক জ্যাম। জ্যামের মধ্যে হঠাৎ দেখতে পেলাম র্যাব অটো সিএনজি ট্রাক বাস সবই তল্লাশি করছে। মনে মনে ভাবছিলাম, এইদিক থেকে চোরাচালানের ইনফরমেশন হয়তো তারা পেয়েছে; কিন্তু এটা যে আমরাই, তা কল্পনারই ছিল না। আর কল্পনা করবই বা কেন? আমরা তো কোনো অন্যাে সাথে জড়িত নই। শেষে আমাদের গাড়ির কাছে এসে নক করলো। জানালা খোলার পর সবার নাম জিজ্ঞেস করাতে লাগলো। আমার নাম জিজ্ঞেস করলে বললাম, ইলিয়াস। সে ওয়ারলেসে বলে দিল, স্যার পাইছি। সেখান থেকে বলা হল, গাড়ি সাইড কর। মোবাইলগুলোও নিয়ে নেয়া হল। আর বলে গেল, আপনারা গাড়ি থেকে নাইমেন না। একটু পর এসে বললো, ইলিয়ান সাব আপনি গাড়ি থেকে নামেন। আমি বললাম, স্যার কোথায় যাব? তারা বললো, বড় স্যার আছেন। স্যার আপনার সাথে একটু কথা বলবেন। আমি হাঁসি খুশিই নেমে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার কই? তারা বললো, এই খানেই আছে। আমি বললাম, বাহিরে এসে কথা বলি… তারা বলল, না বাইরে গরম তো… এসি গাড়ি… ভিতরে গিয়েই কথা বলেন। ওঠে বসতেই দুই পাশে দুইজন র্যাব সদস্য বসে গেল। বাইরে আর বের হওয়ার সুযোগ নেই। তখন আমার বুঝে আসল, ‘স্যার কথা বলবে’ এটা আসলে একটা উসিলা মাত্র। গ্রেফতার করে সিদ্ধিরগঞ্জ র্যাব-১১তে নিয়ে গেল সেখানেই সারা রাত ছিলাম।

স্মারক: মামলা সম্ভবত আরো কিছু দিন আগেই হয়েছিল। এই মামলা সম্পর্কে কোনো ধারণা আপনার ছিলো কিনা?

হামিদী: মামলা কবে হয়েছে তা কিন্তু আমি আজও জানি না।

স্মারক: পরবর্তীতে মামলার এজাহারে বলা হলো, কেনানীগঞ্জে একটা মিটিং থেকে …

হামিদী: গ্রেফতারের পর আমি সিদ্ধিরগঞ্জে ছিলাম একদিন। র‌্যাব হ্যাডকোয়ার্টারে ছিলাম একদিন। এরপর বসিলা র‌্যাব-২ তে ছিলাম আধাদিন। সেখান থেকে রাত চারটার দিকে একটা কোস্টারে করে আমি ও বিশবাইশ জন র‌্যাবসদস্যসহ আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো কেরানীগঞ্জে এক জায়গায়। সেখানে আগে থেকেই লাইট ফিটিং করা ছিল। লাইট জ্বালালো। আম গাছের নিচ থেকে কালো পট্টি বাঁধা দুই র‌্যাব সদস্য আমার দুপাশে হাত ধরে বলল, একটু হাঁটেন। হাঁটলাম। তারা ভিডিও করলো। ছবি তুললো। বুঝাতে চাচ্ছিল, আমাকে যেন কোনো বাগান থেকে ধরে আনছে। আমিও একটু আতঙ্কিত হয়েছিলাম, আবার জঙ্গি বানিয়ে দেয় কিনা। সেখান থেকে কেরানীগঞ্জ থানায় নিয়ে গিয়ে তারা মামলার কাগজ বুঝিয়ে দিল। বললো, মামলা বুইঝা নেন। তারা আমাকে হাজতে ঢুকিয়ে দিল। আগে তো কখনো মামলা খাইনি তাই বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে। সেখানে হাজতে যারা ছিল, তারা বললো, কাল দুপুর বারোটার মধ্যে আপনাকে কোর্টে উঠানো হবে। কোর্টে আমাকে আসরের পর নিল। সেখানে গিয়ে দেখি কোনো লোকজন নেই। কোর্টে নিয়ে পারদে ডুকালো। গারদ থেকে হেলমেট, বুলেটগ্রুফ জ্যাকেট, হাতে আবার হ্যান্ডকাফ, কোমরে দড়ি বাঁধা অবস্থায় বের করে নিয়ে এলো। একটা হুলুস্থুল কাণ্ড! ওসি বলছিল, খবরদার! কেউ কেউ যেন না আসে। কামান আছে। যে আগে তাকেই ফায়ার করা হবে। অনুমোদন আছে। কোনো বিচারক বা কারো কাছে নেয়নি। বের করে এনে বললো, আপনার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। থানায় আনা হলো। সেখানে সাতদিনের পাঁচদিন ছিলাম। আর দুইদিন ছিলাম মিন্টু রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে জুনায়েদ আল হাবীব সাহেব, সাখাওয়াত সাহেব, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী সাহেব, জালাল সাহের তাদের দেখলাম। উনারাও সেখানে রিমান্ডে ছিলেন। সেখানে জালাল সাহেব বললেন, আপনার মামলা কিন্তু এই… আমি নাকি তারবিয়াতুল উম্মাহ কী নাশকতা করেছি। অথচ আমি সেখানে কোনোদিন যাইনি। আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, হুজুর কি শিশুর? তিনি বললেন, হ্যা আপনার কাগজ পত্র সব দেখেছি। আপনি এক নম্বর আসামি। তখন মনটা একটু খারাপ হলো।

স্মারক: মোট কয়টা মামলা ছিল?

হামিদী: এই একটা মামলা। মাঝখানে রোজার মাঝে একটা মামলা দেয়া হলো, তের সালে মতিঝিলে একটা গাছ কাটার মামলা। ওই মামলায় আমি এজাহারে ছিলাম না। সন্দেহভাজন ছিলাম। তিনদিনের রিমান্ড হয়। রিমান্ডে অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মামলায় আমি কি এজহারভুক্ত আসামি? তিনি বললেন, না সন্দেহভাজন। আমি বললাম, স্যার কই তের সাল আর কই একুশ সাল। এই সাত আট বছর পর কী বুইঝা আমাকে সন্দেহ করলেন যে, আমি গাছ কাটছি? তিনি বললেন, এসব বলে লাভ নেই, এসব ফর্মালিটি। আমি বললাম, এই ফর্মালিটিতে যদি যায়, তবে এর দায় দায়িত্ব কার? তিনি বললেন, দোয়া করেন আল্লাহর কাছে।

স্মারক: রিমাণ্ডে কেমন আচরণ করা হয়েছে?

হামিদী: মামলা আসলে র‌্যাবের। পরে তারা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আর পুলিশ রিমান্ডে তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা মাঝে মাঝে আসলে বলতাম, স্যার আমার অপরান কী? তিনি বলতেন, বলবো আপনাকে। এছাড়া নিয়মতান্ত্রিক কোনো জিজ্ঞেস তারা করেনি। রিমান্ডের দুইদিন ছিলাম, মিন্টু রোডে। আমি কিন্তু মিন্টু রোডের আসামি ছিলাম না, ছিলাম কেরানীগঞ্জের সেখানেও আমাকে মামলা সংক্রান্ত কোনো তারা করেনি। তারা জিজ্ঞেস করেছে, তা নিয়ে কারা কারা বক্তব্য দিয়েছে? আমি বললাম, কিভাবে বলবো। আমি তো সেভাবে কোট করে রাখিনি। ওইদিকে তারা একটা কাগজে লিখতে লাগলো, মামুনুল হক, রফিক মাদানী… আমি কিছু বলতেও পারছি না। কিভাবে বলবো। সেখানে তো আমার সেই পাওয়ারটাও নেই।

স্মারক: কারাগারের দিনগুলো…

হামিদী: কারাগারের দিনগুলো অনেক কষ্টের, দুর্বিষহ। আমরা তো সব সময় চেয়ার বা গদিতে বসে অভ্যস্ত। কারাগারে তো কোনো টুল নেই বা কোনো চেয়ারের ও বরাদ্দ নেই। ডাক্তার যদি সাজেস্ট করে, তবে বাহির থেকে নিচে আনা যায়। আবার কারাগারের ডাক্তাররাও সেভাবে সাজেস্ট করে না। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটিতে একজন ডাক্তার আছে ভালো। এমবিবিএস। তিনি সপ্তাহে দুই তিন দিন আসেন। এইখানে আসামি ২৮০০/৩০০০। একজন ডাক্তার আর ক্যাজন রোগী দেখতে পারে দুই তিন দিনো সেখানের খাবারটা এত কর এটা আর দুইটা তখন একটা বালিশ, সেটাতে শুয়ে থাকতে থাকতে শরীর বাসা করে… আর কাল তো চটের মত। এটাতে শরীর চুলকায়। আর জেলখানার মাজালি চুলকানির রোগটা একটু বেশি। বাথরুম ও পুরোপুরি আনদ্ধ না। কোমর বা বুক পর্যন্ত থাকে দেয়াল। বাথরুমের দুর্গন্ধে সারা রুম তবে থাকে। আর সকাল বিকাল একঘন্টা করে পানি থাকে আর সাড়া দিন পানি থাকে না লাইনে। ষাট লিটারের দুইটা বালতি বরাদ্দ সারাদিনের পানি রিজার্ভ রাখার জন্য।

স্মারক: কতটুকু পানি রিজার্ভ রাখতে হয় প্রয়োজন পূরণ করতে?

হামিদী: পানি রিজার্ভ বলতে; এই যে ধরুন,আমরা একেক রুমে প্রায় চার পাঁচজন করে ছিলাম। কেউ ওয়াশরুমে গেলে পর্যাপ্ত পানি না ব্যবহার করলে, রুমে দুর্গন্ধে থাকা যেত না। তারপর ওজু-গোসলের জন্যও পানি লাগতো। কাজেই পানির অনেক সংকট ছিল। এক ঘন্টা পানি থাকতো সে সময়ের মধ্যে সব জরুরত, কাপড় ধোয়াসহ যাবতীয় কাজ শেষ করার চেষ্টা করতাম। এক ঘন্টায় অনেক সময় হতো না। কারণ বৃদ্ধ মানুষ যারা ছিলেন, তাদের হাজত সারতে সময় বেশি লাগতো। তাতে এক ঘন্টা শেষ হয়ে যেত অনেক সময়। এ হলো ভেতরের অবস্থা। কখনো বসে থাকতাম। কখনো শুয়ে থাকতাম। পুরাতন কয়েদিরা আমাদের বলতো, হুজুর বারিন্দাতে হাঁটুন। অসুস্থ হলে দেখার তো কেউ নেই এখানে। খাওয়ার কিন্তু ভালো ওষুধও নাই। কথাটা আসলেই ঠিক। আসলেই ওষুধ পাওয়া যেত না প্রয়োজনীয়। ডাক্তার তিনটা লিখলে বলতো, গ্যাস্ট্রিকেরটা নাই। নাই বলতে ১০-১৫ দিনের মধ্যে আর পাওয়া যাবে না। আবার ডাক্তার না লিখে দিলে বাহির থেকে এনেও দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে ডাক্তারকে রিকোয়েস্ট করতাম যে,স্যার! আমার এই ওষুধগুলো লিখে দেন। আমার এই ঔষুধগুলো দরকার। আমি টাকা দিয়ে আনাবো। তারপর উনি লিখে দিতেন। যদিও তখন এক টাকার তো দশ টাকা হয়ে যেতো। আর বাহিরের থেকে অন্যান্য জিনিস এমনকি একটা আপেলও ভিতরে আসতো না।

স্মারক: খাবার কয়বেলা ছিল?

হামিদী: তিন বেলাই। সকালে একটা একটা আটার রুটি। যটা কোনরকম বানানো হয়। ২৮ হাজার বা ৩ হাজার রুটি বানায় তারা একদিনে। সময়ের অভাবে ও বাবুর্চির স্বল্পতার কারণে, কোন রকম বানিয়ে দেয়। মাটা হয় অনেক। এমন এক উন্নতমানের রুটি যা গলা দিয়ে নামানো অসাধ্য এক ব্যাপার। তবুও খেতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। জীবন যে বাচাতে হবে। পেয়াজ, মরিচ আর সিদ্ধ ডিম দিয়ে ভর্তা করে খেয়েছি অথবা ডিম ভাজা কিনে আনতাম। এ খানাও তো প্রতিদিন খেতে ভালো লাগত না।
স্মারক: কাসিমপুরের হাই সিকিউরিটিতে আপনাকে কতদিন রাখা হয়েছিল ?

হামিদী: ছয় মাস গ্রেফতার ছিলাম। তার মধ্যে ৪ থেকে ৫ মাস ছিলাম হাই সিকিউরিটিতে। কেরানীগঞ্জে রাখেনি তেমন আমাদের। যতদিন ছিলাম কষ্ট হয়েছে হয়েছে অনেক সেখানে। ২৪ ঘন্টা এক রুমের মধ্যে আটকে রেখেছে। হাই সিকিউরিটি তো বারান্দায় বের হওয়া যায়। কিন্তু এখানে সেটাও নেই। এখানে মাঝখানে করিডোর আর দুই পাশে রুম। কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটিতে মাঝে করিডোর নাই। তবে সামনে বারান্দা আছে। ৩ বা সাড়ে তিন হাত বারান্দা হবে। বারান্দায় হাঁটা যায়।

স্মারক: অন্যান্য আসামিদের সাথে সাক্ষাৎ বা কথা বলার সুযোগ ছিল কিনা?

হামিদী: আমি তো প্রথম দিকে গ্রেফতার হয়েছি। আমার ৭ দিনের রিমান্ড আগে শেষ হয়েছে। যারা কয়েকদিন পরে গ্রেফতার হয়েছে বা দুই-তিনটা মামলা হয়েছে, তারা ৩০/৪০ দিন রিমান্ডে ছিলেন। ফলে তারা এখানে আসতে অনেক সময় হয়ে গিয়েছে।আমাকে হাই সিকিউরিটিতে জঙ্গি বিল্ডিং এ রাখা হয়েছিল। তার নাম হলো শতাব্দী। সেখানে দেখলাম আইএস, জিএমবি,হিজবুত তাওহীদ, আনসারুল্লাহর সদস্যদের। ব্লক ব্লক করে ভাগ করা। তারা নিজেদের দলের লোকেরা একসাথে থাকে।আমরা ওদের সাথে বসেছি, মিলেছি। জোহরের নামাজ পড়লাম ওদের সাথে দেখলাম অন্যভাবে নামাজ পড়ে। তখন তারা বলল,হুজুর কিছু মনে কইরেন না। আপনাদের সাথে আমাদের আকিদাহত মিল নেই, তাই আপনার পেছনে নামাজ পড়তে পারছি না। হিজবুত তাওহীদরা আমাদের বলে আপনারা হেফাজতের লোক। কাফের মনে করে আমাদের। আমি মনে মনে বললাম, কই আসলাম! কোন মুসিবতে পড়লাম! ওই বিল্ডিং এর তিনতলায় কিছু আলেম ছিলেন। উনারা খবর পেলেন যে, আমি এখানে আছি এবং আমার সাথে আরো দুই তিনজন আছে। ওরা আমাদের জন্য জায়গা ম্যানেজ করার চেষ্টা করলেন। সিট চেঞ্জ করার জন্য একজনের জন্য তিন প্যাকেট সিগারেট লাগে। সেবকরা তারপর সুবিধারদের থেকে লিখে নিয়ে আসে।এরপর ২য় মামলায় ছিলাম। রিমান্ড শেষ করে কেরানীগঞ্জে ছিলাম ১৫ থেকে ২০ দিন। সেখান থেকে জুনায়েদ আল হাবিব, সাখাওয়াত হুসাইন রাজি, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী সাহেবসহ ৪০-৫০ জনকে একসাথে হাই সিকিউরিটিতে নিয়ে গেল। সেখানে প্রথমে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলো আমাদের।তারপর শওকত নামক বিল্ডিংয়ের দুই তলায় পাঠালেন। সেখানে যেয়ে মামুনুল হক সাহেব সহ আরো অনেককে দেখলাম।

স্মারক : একই ওয়ার্ডে ছিলেন?
হামিদী: একই সাথে। একই বিল্ডিং এ। একই ফ্লোরে ছিলাম আমরা।

স্মারক: আপনাদের দিয়ে কোন কাজ করানো হয়েছে কিনা সেখানে?

হামিদী: না। আমাদের তো ছাড়েইনি। আমরা মার্ডার করে গেলে হয়ত আরো আরামে থাকতে পারতাম। আমরা যে হুজুর এটিই উনাদের মুল সমস্যা। আমরা হুজুরগিরি করে এখানে এসেছি। যার কারণে ওদের সাথে ম্যাচিং-ই হয়নি আমাদের। অন্যান্য কয়েদিদের জন্য আফসোস হয়েছে। কারণ তারা আমাদের সাথে কথা বলতে আগ্রহী ছিল। পরিবেশটা অনুকূল ছিল না। আমাদের প্রতি অনেক পাহারা ছিল। যারা আমাদের এখানে ডিউটি করত তাদেরকে বাছাই করে এখানে দেয়া হয়েছে। যারা জাহান্নামের দারগাদের মতো কানেও শোনে না, চোখেও দেখেনা। চোখে দেখলে তো মায়া লাগবে, কান্নার আওয়াজ শুনলেও তো ভেতরে আবেগ জন্মাতো। কিন্তু তারা দেখেও না শুনেও না।

স্মারক: অন্যান্য কারাবন্দীদের কি অবস্থা, তাদেরকে কেমন দেখেছেন?

হামিদী:– সবচেয়ে করুন অবস্থা হলো তাদের; যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। যাদের পারিবারিক আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য পরিবার টাকা পাঠায়। তারপর তারা পিসি থেকে কিনে খাবার খায়। করুন অবস্থার মধ্যে কিছু ছাত্র ছিল বিশেষ করে। ডেমরা যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া অঞ্চলের ছাত্র ছিল কয়েকজন। তারা রাস্তাঘাট থেকে বিভিন্নভাবে গ্রেপ্তার হয়েছে কারো বাড়ি পটুয়াখালীর কোন অজোপাড়া গ্রামে। কারো নোয়াখালীর শেষ মাথায়। এরকম দূরে দূরে। তাদের গার্ডিয়ানরা হয়তো দিনমজুর বা কৃষক। ক্যাশ টাকা নেই তাদের কাছে। সহজ সরল মানুষ। জেল, কোর্টের নিয়ম জানেনা। তারা যে ঢাকায় এসে, তাদের জন্য ভালো কোন লয়ার নিয়োগ করবে, এতটুকুও করতে পারত না। আবার অনেক ধান্ধাবাজরা বসে থাকতো, কোর্টের বারান্দায়। যারা বাস্তবোসভালো কোন লয়ার না। তারা প্রতারণা করতো সাধারণ মানুষদের সাথে। এখানে কোন লয়ারের মান কেমন? তাদের কি ফিশ কত এটা তারা বুঝতো না। যারা বুঝে একটু, তাদের কাছে টাকা নাই। আবার কেউ কেউ লাইন-ঘাটও বুঝতেছেনা। তাই অযথাই টাকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের। লস হয়ে যাচ্ছে অনেক । যেমন এক ছেলে আমাদের সাথে ছিল। ওর বাড়ি কুমিল্লা। ওর লুঙ্গি নাই। ওর আব্বু লুঙ্গি দিয়ে গিয়েছে। হাই সিকিউরিটির গেট পর্যন্ত আসছিল বাবা। করোনার কারণে সাক্ষাৎ বন্ধ। বাবা তার পুরাতন লুঙ্গি দিয়ে গিয়েছে। লুঙ্গি পেয়ে ছেলে কান্না শুরু করলো যে আব্বা পুরাতন লুঙ্গি দিয়ে গিয়েছে। একটা লুঙ্গিও কিনতে পারেনি। বাবার ব্যবহারেরটা তাকে দিয়ে গিয়েছে। তাদের জামিনের তাহলে কি অবস্থা হবে কল্পনা করুন! তারা জানতো যে এক মাসের আগে জামিন হবে না। তবুও তারা গার্ডিয়ান থেকে, মিথ্যা আশা দিয়ে, টাকা নিতো প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। ইসলামী সংগঠনগুলো যারা আছে, তাদের মধ্যে দেখেছি একমাত্র মজলিস ছাড়া কেউ কারো ভেতরে খোঁজ নিত না।

স্মারক: জেলে এমন ছাত্ররা যারা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না এমন কারো কথা মনে আছে কিনা?

হামিদী: ওদেরকে আমরা মামুন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। মামুন সাহেবকে আমরা দেখেছি, আপ্রাণ চেষ্টা করতেছেন, যে আপনারা বের হন। আপনারা থাকলে তো আমার বের হওয়া হবে না। উনি চাচ্ছেন আমার কি হবে এটা পরে; আগে আপনারা বের হোন। কোন ওকালত নামা আসলে খুব খুশি লাগতো। এখন অকালত নামা তো সাক্ষর করে ছেড়ে দেয়া হলো। এখন উকিল কেমন? কে উনি? এটা তো জানি না। কারণ গার্ডিয়ানরা ধরেছে। আবার প্রকৃতপক্ষে কে ধরেছে এটাও জানা যেত না। কারণ আমাদের সাথে তো যোগাযোগ হতো না। অন্যান্য আসামিদের প্রতিদিন যোগাযোগ করতে দেয়া হতো। আমাদেরকে দেয়া হতো না।

স্মারক: অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যা অন্যান্য আসামিরা পেতো তা কি পেয়েছেন?

হামিদী: না আমাদেরকে সেসব সুবিধা দেয়া হতো না।যেমন আগের কথায় সেগুলোর কিছু বিবরণ দিলাম। অন্যান্য আসামিরা জেলখানায় ঘুরে বেড়াতো। আবার লকাবে যেতো। আমাদেরকে আটকে রাখা হতো এক রুমে। বড়জোর বারান্দায় যাওয়া যেত বা এক রুম থেকে আরেক রুমে। আমরা যে ব্লকে থাকতাম সেটা আটটি রুম সম্বলিত। এই আট রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছো। অথচ আমাদের এই বিল্ডিং এর নিচ তলারয় বা উপরের বিভিন্ন তলার লোকেরা একেক জন ১০ মিনিট করে কথা বলছে ফোনে। কেউ লয়ারের সাথে। কেউ আবার গার্ডিয়ান দের সাথে। জামিনের খবরাখবর নিচ্ছে। আমরা অন্ধকারে থাকতাম। কোন খবর পেতাম না। আমরা অনেক রিকোয়েস্ট করেছি ঈদ বা অন্যান্য উপলক্ষে কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য। কারণ ৪-৫ মাস হয়ে গিয়েছে যোগাযোগবিহীন অবস্থায়। তারা বলতো উপরের আদেশ হুজুর!

স্মারক : আত্মীয়স্বজন কারো সাথেই কি যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি?

হামিদী: না কারো সাথেই যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি। কউ কোর্টে হাজিরা দিতে আসলে বা আদালতের এজলাসে দাঁড়ানোর সময় বা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কারো সাথে দেখা হলে কিছু কথা বলা হতো চিৎকার করে। কিন্তু হাই সিকিউরিটিতে আমাদের পিসি থেকে টাকা আসলে কে টাকা দিল বাবা না স্ত্রী তা জানা যেত না।

স্মারক: টাকাটা কি ঠিকমতো পৌঁছায়?
হামিদী: হাইসিকিউরিটিতে টাকাটা পৌঁছায়।

স্মারক: কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনার সহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরামের ইবাদতের কি পরিবেশ ছিল?

হামিদী: জোহর ও আসর আমরা বারান্দায় জামাত করতাম। আর বাকি নামাজ রুমে তিন চারজন করে জামাত করতাম। আর যোহরের নামাজের পর বারান্দায় কখনো দোয়াযে ইউনুস বা কোরআন খতমসহ কান্নাকাটি হত প্রতিদিন। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত! কারো সংসার দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। তাদের সংসারের কে টানবে! ওলামায়ে কেরাম তো তত স্বচ্ছলও ছিল না। তাই ভেতরে যেভাবে কান্নাকাটি হয়, সেই কান্নার এক ফোঁটা পানি যদি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, তাহলে এটার রিয়াকশন যে কি হবে, আল্লাহই ভাল জানেন। যাদের ফ্যামিলি ঢাকায় থাকতো তারা গ্রামে চলে গিয়েছে। কিভাবে থাকবে এত টাকা ভাড়া দিয়ে! ইত্যাদি নানান সমস্যা ছিল সবার। আবার বিভিন্নভাবে দুঃসংবাদও পৌঁছতো। অনেকের বাচ্চা হয়েছে! অনেকের বাপ- মা মারা গিয়েছে! আবার অনেকের নতুন বিবাহ হয়েছে, বউ চলে গিয়েছে ইত্যাদি নানা সমস্যায় ছিলেন। আমাদের যাদেরকে ধরেছে আমরা তো কেউ দোষী না। আমরা দোষ করলে, আল্লাহর কাছে করেছি। আল্লাহর কাছে সবাই দোষী। কেউ কবিরা গুনাহ করেছি। কেউ সগিরাহ। নিষ্পাপ বলতে কেউ নেই। তবে মাসের পর মাস জেল খাটার মত কোন অন্যায় আল্লাহর জমিনে আমরা করি নি! গণতান্ত্রিক দেশে আমার কথা বলার অধিকার আছে। কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমি কথা বলব। সেটা যে কারো স্বার্থের বিপরীত লাগলে আমার তো কিছু করার নেই। আমার তো দায়িত্ব পালন করতে হবে। সংসদে সামনাসামনি একে অপরকে এই ধরনের কথা তো বলেই। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। মৌলিক অধিকার। তাই আমরা যা বলেছি, এতে মনে হয় না আমরা কোন দোষ করেছি।

স্মারক: কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনারসহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরামের মন মানসিকতা কেমন ছিল?

হামিদী: সবাই অনেক ক্লান্ত… অসুস্থ! চেয়ারে বসে থাকা যায়; কিন্তু ফ্লোরে কতক্ষণ বসে থাকা যায়! আমার মন মানসিকতা এমন ছিল যে, কোন উপায়ে বের হই। বের হওয়ার পর কি হবে, পরেরটা পরে দেখা যাবে। ভেতরে আছি এটা একটা পরীক্ষা। অধিকাংশরই একই মনোভাব ছিল। এটা থাকার জন্য উপযুক্ত না। কোন পরিবেশেই নেই। যে কোন উপায়ে বের হই। এভাবে ভেতরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়াটা বোকামিই বটে! তাহলে কেমন যেন নিজের শরীরের উপর টর্চার করা। মানসিকতার উপর টর্চার করা। আবার যারা জেলে আছে তাদের ফ্যামিলিও তো সুখে নাই। তাদের বাবা-মারাও তো থাকতে পারছে না তাদের ছেড়ে। তাদেন সন্তানরাও তো ভোগান্তিতে আছে। আমি একজন অভিভাবক। কেননা আমারও বাচ্চা আছে, পিতা-মাতা আছে। তাদের নিয়ে একটা সংসার চালাতাম। আমার অবর্তমানে তারা কিভাবে চলছে? অভিভাবকত্ব কে করছে? কে ডাক্তার দেখাচ্ছে? কে তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছে? এই মানসিক টেনশন খুবই বেদনাদায়ক ছিল। ইত্যাদি কারণে আমরা চিন্তা করেছি, শর্তসাপেক্ষে হোক অথবা শর্ত ছাড়া, যে কোন উপায়ে যেন মুক্ত হতে পারি। এটাই উত্তম মনে হয়েছে। কারণ আগে জীবন বাঁচুক। পরে সুযোগ হলে কাজ করব। আমি কাজ না করতে পারলে অন্য আরো অনেক মানুষ আছে । তাদের দিয়ে আল্লাহ কাজ নিবেন।

স্মারক: কারাগারের বিশেষ কোন স্মৃতি আছে কি যা এখনো আপনার মনে পড়ে?

হামিদী: স্মৃতি বলতে আর কি! একসাথে যাদের সাথে ছিলাম সেগুলো সবই স্মৃতি। যে কষ্ট করে থেকেছি আজকে আমি বাহিরে কত রকম খানা খাচ্ছি, কারাগারে এটা কল্পনাও করা যেত না। কারাগারে গোশতের ঝোল পেলে এভাবে খাওয়া হতো, যেন কত দিন ধরে না খাওয়া। যেমন কত গরীব মানুষ খানা এত তৃপ্তি নিয়ে খায়, অথচ সে খাচ্ছে আলু ভর্তাই। আমরা তরকারি থেকে আলু বাছাই করে নিতাম। তারপর পেয়াজ, মরিচ কেটে এগুলো দিয়ে ভর্তা বানাতাম। পেঁয়াজ,মরিচ আর লবন দ্বারা ভাত খাইছি। আপনারা হয়তো খেয়াল করবেন ; যারা ভেতরের থেকে এসেছে বা ভেতরে আছে, সবার চেহারাতে ক্লান্তির ছাপ রয়ে গিয়েছে। অনেকের মানসিক টেনশনের কারণে চুল- দাড়ি পেকে গিয়েছে। আমরা যারা আলেম আছি তাদের কাছে হয়তো টাকা নেই। তবে এরকম খানা খেয়ে আমরা বড় হয়নি। আমরা যেটা খেয়েছি, সুস্বাদু, ভালো মানের খাবারই খেয়েছি আল্লাহর রহমতে।

স্মারক: বিপদে আল্লাহর রহমত বেশি অনুধাবন করা যায়। এমন কোন স্মৃতি আছে, যেটা সরাসরি আল্লাহর রহমত বলে মনে হয়। একটা তো আছে নিজামের মধ্যে রহমত পাচ্ছি, তবে কিছু বিষয় থাকে এমন থাকে যা নেজামের বিপরীত। যাকে কারামত বলে ব্যক্ত করা হয়, এমন কোন স্মৃতি?

হামিদী: কারামত বলতে দেখেন; আমি ছয় মাস জেল খেটেছি। আমি ডায়াবেটিকসের রোগী। বের হওয়ার পর ডাক্তারের চেকআপ করার পর দেখলাম আমি সুস্থ। এখন তো বাসায়, কিন্তু এখন অসুস্থ। ভেতরের অনুন্নত খাবার ও ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকা এটা আমি মনে করি আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত ও রহমত। এ খাবার বাহিরে খেলে হয়ত আমরা একদম চলতে পারতাম না।

স্মারক: জামিনের ব্যবস্থা কিভাবে হলো?

হামিদী: আমার পরিবার অনেক তৎপর ছিল। জুনায়েদ বাবুনগরি সাহেবের অনেক সুপারিশ ছিল উপরের মহলের কাছে। আরো অনেকের ব্যাপারেই সুপারিশ ছিল। আমার মুসল্লিরাও আছেন, যাদের চোখের পানিগুলো হয়তো এক জায়গায় এক নামে এসে জমা হয়েছে। এসব কারণেই হয়তো অনেক সহজ হয়েছে। আর আমার ভেতরে ছিল যে, আল্লাহর আদালতে জামিন না হলে তো দুনিয়ার আদালতেও জামিন হবে না। আর আমরা সবাই আমলে ছিলাম। আমি মনে করি সেই চোখের পানিগুলো অবশ্যই কবুল হয়েছে। এরকম কান্নাকাটি কখনো বিফল হতে পারে না। এটার প্রতিফলনটা যে কিভাবে হবে, জাতি তা একদিন অবশ্যই দেখবে ইনশাআল্লাহ। জাতি না দেখলেও হয়ত এই কোরবানির মাধ্যমে ইসলাম আরো বহু দূরে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ । এটা হল আমার দিলের বিশ্বাস। হয়তো ইসলামের অগ্রগতি দেখবেন বা জালিমকে শায়েস্তা করার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে সান্ত্বনা দিবেন ।

স্মারক : সর্বশেষ আমাদের জন্য কোন নসিহত…

হামিদী: ফেসবুকে যতদিন কারাবন্দীদের অবস্থা প্রকাশ হতে থাকবে; ততদিন আমাদের বিরোধী চক্রগুলো সক্রিয় থাকবে। এগুলো বাহিরে প্রচার বন্ধ করতে পারলে, হয়তো ভেতরে আমরা আরো দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারব। এগুলো হাইলাইট হলে যারা ভেতরে আমাদের প্রতি সহযোগিতা করবে, তারাও ভয় থাকবে যে, আমার উপর কারো বিশেষ নজর পরে কিনা! যেমন জজসাহেব ইত্যাদি। যারা ভেতরে আছেন তাদের মুক্তির জন্য কিছু লেখা বা স্ট্যটাস দেয়া আমি আক্রমণাত্মক মনে করব।এগুলো থেকে অন্তত আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিরত থাকলে ভালো হবে কারাবন্ধুদের জন্য। যেমন মজলিসের পেজ থেকে আমার মুক্তির ব্যাপারটা প্রচার হয়েছে। তারপর মুরুব্বিদের মাধ্যমে আবার সেটা ডিলিট হয়েছে। এতে আমি আমার পজিশনে আবার সুন্দরভাবে পৌছতে পেরেছি। আমার ধারণা যা এরকম করতে পারেনি অর্থাৎ বেশি প্রচার হয়েছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে। হয়ত চাকরি চলে গেছে বা অন্যান্য সমস্যা হয়েছে। তারপর আমরা যারা বক্তব্য দেই, সেই বক্তব্যকে যারা কাটিং করে প্রচার করে, এটা যদি আমরা বন্ধ করতে পারতাম ;তাহলে এটা আরো ভালো হতো। এগুলো নিয়ে নানান ভুল বোঝাবুঝি হয়। বক্তারও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়, এর মাধ্যমে দ্বীনেরও ক্ষতি হয়ে যায়। যেমন আমাকে রিমান্ডে একটা ভিডিও দেখানো হলো। যেটার হেডলাইন হল “চাঁদপুর কাঁপিয়ে তুললেন ইলিয়াস হামিদি” এরকম হেডলাইন দেখলেই তো প্রশাসনের লোকেরা আতঙ্কে পড়ে যায়, যে সে এটা কি বলল! তখন বক্তব্যটা পুরা শুনে। তখন যা কিছু তার কাছে অসঙ্গত মনে হয় বা আপত্তিকর মনে হয় সেগুলোকে সে দায়িত্বশীল হিসেবে জবাবদিহিতার আওতায় আনে। তারপর সাংগঠনিক কোন মিটিং এর ছবি দিয়ে দেয়া এটাও সমস্যাকর বলে মনে করি। এতে যারা পরিকল্পনা করতেন তারা কেউ কাজ করতে পারবেনা। নজরে পড়ে যাবে। গোয়েন্দা বা বিভিন্ন এজেন্সি তাদের মধ্যকার একেক জনকে টার্গেট করে তাদের পরিকল্পনা জেনে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এজন্য নীরবে তাবলীগের মতো কাজ করে, ভাইদের মুক্ত করে আনা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নিরিবিলি কাজকে চলমান রাখতে পারাই সাহসিকতার পরিচায়ক হবে।

স্মারক: এখন বের হওয়ার পর কোন জায়গায় কোন সমস্যার সম্মুখিন হয়েছেন কিনা?

হামিদী: বের হওয়ার পর উনারাই আমাকে বলেছেন যে, আপনি আপনার কাজ করতে থাকেন। তবে সংগঠনের কাজ থেকে দূরে থাকুন। কেননা আপনার এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে। এখন এই এক্সিডেন্টের পা নিয়ে খোঁড়ায়ে খোঁড়ায়ে চলেন। এক্সিডেন্টের পা নিয়ে দৌঁড়ায়েন না।

স্মারক: অনেক অনেক শুকরিয়া আমাদেরকে সময় দিয়ে, আমাদের সাথে থাকার জন্য। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আমাদের সামনের পথ চলা সহজ হয়। সত্যের পথে নির্ভীক ছুটে চলা যেন আল্লাহ কবুল করেন।

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন

যোগদিন আমাদের সাথে

ইসলামের মূল তিন কাজ- তা’লীমে দ্বীন (দ্বীনের শিক্ষা), তাবলীগে দ্বীন (দ্বীনের দাওয়াত) ও তাগলীবে দ্বীন (দ্বীনের বিজয়) এর সমন্বয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য পাঁচ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১. দাওয়াত, ২. সংগঠন, ৩. প্রশিক্ষণ, ৪. সমাজকল্যাণ, ৫. আন্দোলন। আমি বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ঘোষিত কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এ সংগঠনে যোগদান করছি।

Scroll to Top