কেন্দ্রীয় সম্মেলন ’১৬ এর ঘোষণা (ভিডিও)

বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখার কেন্দ্রীয় সম্মেলন ’১৬ এর ঘোষণা


১. দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীনি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে দ্বীনি শিক্ষার অভাবে আজ সমাজের উচ্চ শিক্ষিত ছাত্রদের মাধ্যমে পিতা মাতা হত্যাসহ নানা অপকর্ম প্রকাশ পাচ্ছে। ছিন্নমূল শিশুরা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে শিক্ষার অভাবে। স্বাধীনতা পরবর্তী অভিবাসী বিহারীসহ রোহিঙ্গা অন্যান্য অভিবাসীরা আজ শিক্ষাহীন নৈতিকতা বিবর্জিত জীবনযাপন করছে।

তাই বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীনি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

২. দাফতরিক সম্পর্কবিহীন সরকারী হস্তক্ষেপমুক্ত কওমী সনদের সরকারী মান দিতে হবে।

এ দেশের বিপুল পরিমাণে শিক্ষার্থী কওমী মাদরাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে। তারা বিভিন্ন বোর্ডের অধীনে তাকমীল মারহালায় (শ্রেণীতে) উচ্চতর শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে। শাইখুল হাদিস রহ. এর নেতৃত্বে আমরা তাকমীল শ্রেণির সনদের সরকারী মান দেয়ার আন্দোলনও করেছি। সেসময়ও আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য ও দাবি ছিল সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত শুধুমাত্র সনদের সরকারি মান দিতে হবে।
তাই বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে স্পষ্ট দাবি জানাচ্ছে, দাফতরিক স¤পর্কবিহীন সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত কওমী সনদের সরকারি মান দিতে হবে।

৩. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, বিতর্কিত শিক্ষা আইন ২০১৬ ও পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুত্ববাদের অন্তর্ভুক্তি বাতিল করে শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী ভাবধারার বিষয় সংযোজন করতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, শিক্ষা আইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনকে বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা মাদরাসা-মকতব প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পায়তারা চলছে এবং কুরআনী শিক্ষার বিস্তৃতি বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া মুসলিম অধ্যুষিত এই বাংলাদেশে অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারার গল্প-কবিতা বাদ দিয়ে যে হিন্দুত্ববাদ যুক্ত করা হয়েছে, আমরা আশা করি, আগামী ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে তা বাতিল করে ইসলামী ভাবধারার বিষয় সংযোজন করা হবে। অন্যথায় এ দেশের ছাত্র সমাজ ও তাদের সচেতন অভিভাবকবৃন্দ এ বিতর্কিত শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে স্পষ্ট দাবি জানাচ্ছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, বিতর্কিত শিক্ষা আইন ২০১৬ ও পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুত্ববাদের অন্তর্ভুক্তি বাতিল করে ইসলামী ভাবধারার বিষয় সংযোজন করতে হবে।

৪. কাগজ, কলম, বইসহ সকল শিক্ষা উপকরণের মূল্য কমাতে হবে।

আজ আমরা লক্ষ্য করছি, পরিকল্পিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। প্রতিশ্রুত বিনামূল্যে বিতরণের বই সুষ্ঠু বণ্টন হচ্ছে না।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে, বিনামূল্যে বিতরণের বই সুষ্ঠুভাবে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সকল প্রকার ভ্যাট প্রত্যাহার করে শিক্ষাক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে কাগজ, কলম, বইসহ সকল শিক্ষা উপকরণের মূল্য হ্রাস করতে হবে।

৫. নারীদের পূর্ণ নিরাপত্তার লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র পৃথক নারী শিক্ষালয় স্থাপন করতে হবে।

আজ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সহশিক্ষার কুপ্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিক্ষার মনোরম পরিবেশ অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার ভয়াল গ্রাসে বিপর্যস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা মনে করে, নারীসমাজের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা ও সামাজিক নিরাপত্তা সুসংহত হবে।
তাই বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছে।

৬. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

আজকের এ সম্মেলন গভীর উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা দাড়ি, টুপিওয়ালা, হিজাব পরিহিতা শিক্ষার্থীদের হয়রানির মাত্রা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় পোশাক পরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।
তাই বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে, অবিলম্বে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ কওে পড়াশোনার পরিবেশ নির্বিঘ্নে করতে হবে।

৭. শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করে মানস¤পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

আজ কিছু সংখ্যক মানুষ শিক্ষার মত মহান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পণ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। মানহীন শিক্ষা আজ জাতির শিক্ষিত বেকারের তালিকা বৃদ্ধি করছে।
তাই বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করে মান সম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. পরীক্ষায় অনিয়ম, নিয়োগ দুর্নীতি বন্ধ করে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

আজ পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগেই বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। নিয়োগ পরীক্ষা নামক সাজানো নাটকের শেষ হাসিটা ঘুষ দেয়া দুর্নীতিবাজ অযোগ্য মেধাহীন মুখেই ফোটে।
তাই বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে পরীক্ষায় অনিয়ম, নিয়োগ দুর্নীতি বন্ধ করে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

৯. নৈতিকতা বিবর্জিত, ইসলামবিরোধী উস্কানীমূলক সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করে সুস্থ, নৈতিক মূল্যবোধস¤পন্ন সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে।

আজ সংস্কৃতি চর্চার নামে পরকীয়া, অবৈধ প্রেম ভালোবাসাসহ বিজাতীয় কালচার, ভারতীয় চ্যানেলের ছয়লাপে নীতি নৈতিকতা হারাচ্ছে ছাত্র ও যুব সমাজ। বিভিন্ন মঞ্চ নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে দাড়ি, টুপি, বোরকাসহ ইসলামী নিদর্শনসমূহকে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে।
তাই বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে- নৈতিকতা বিবর্জিত, ইসলামবিরোধী উস্কানীমূলক সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করে সুস্থ, নৈতিক মূল্যবোধস¤পন্ন সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে।

১০. মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা ও দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

আজকের এ সম্মেলনে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সে দেশের সরকার, সেনাবাহিনী ও সংখ্যাগুরু সা¤প্রদায়িক গোষ্ঠী যুগযুগ ধরে জাতিগত দমন পীড়ন, গণহত্যা ও বর্ববরতা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। গত নভেম্বর থেকে সেখানে হত্যা ও অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। হাজার হাজার মানুষ ঘর-বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয়ের জন্যে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারও আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে শক্তভাবে বাঁধা দিচ্ছে, শরণার্থী ভর্তি শতশত নৌকা মিয়ানমারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মিয়ানমারের এহেন জাতিগত নির্মূল অভিযান, ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া, হত্যা, ধর্ষন এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা মানবাধিকারের সু¯পষ্ট লংঘন। আজকের এ সম্মেলন অবিলম্বে এ বর্বরোচিত হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে যথাযথ ভ‚মিকা পালনের জোর দাবি জানাচ্ছে।
একই সাথে বাংলাদেশে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা মুসলমানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় দানের জোর দাবী জানাচ্ছে। একই সাথে এ সম্মেলন আলেপ্পোসহ সিরিয়ার বিভিন্ন স্থান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেনে চলমান সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় উত্তোরণের দাবী জানাচ্ছে এবং ফিলিস্তিন, কাশ্মীরসহ বিভিন্ন মুসলিম জনপদে ইহুদীবাদী ও আধিপত্যবাদী আগ্রাসন বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছে।

১১. মুসলামনদের এ দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের নামে তাওহীদবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সুপ্রিম কোর্টের সামনে ভিন দেশীয় সংস্কৃতি অনুযায়ি ভাস্কর্য স্থাপন ৯০ শতাংশ মুসলমানদের চেতনা ও সংস্কৃতি বিরোধী। এ ছাড়াও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ রাষ্ট্রে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপকভাবে মূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। তাই আজকের সম্মেলন থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলামনদের এ দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের নামে তাওহীদবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।

১২. খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মানবরচিত মতবাদসমূহ মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি দিতে বারংবার ব্যর্থ হয়েছে। তাই সারা বিশ্বে আজ মুক্তিকামী মানুষ নিজেদের আশ্রয়স্থল হিসেবে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গ্রহণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
যুব মজলিসের খ শাখার এ সম্মেলন ঘোষণা করছে যে, বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে এক কাতারে এনে রাষ্ট্রব্যবস্থায় দ্বীনকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করা হবে।

১৩. ছাত্র ও তরুণ সমাজে প্রশিক্ষণ নির্ভর সুষ্ঠু ধারার ইসলামী সংগঠনের চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে।

ছাত্র তরুণ সমাজ নৈতিকতা বিবর্জিত, ক্ষমতার বাহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। যুগ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাকওয়াভিত্তিক যোগ্য নেতৃত্ব গড়া অপরিহার্য। তরুণ প্রজন্মকে আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সময়ের এই অনিবার্য দাবি পূরণে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খ শাখা কাজ করে যাচ্ছে।
আজকের এ সম্মেলন ছাত্র, যুব সমাজ ও দেশের দায়িত্ববান সকল নাগরিককে এ আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহবান জানাচ্ছে।

ঘোষনাপত্র পাঠঃ  মুহাম্মাদ আল-আবিদ শাকির।

Scroll to Top
Scroll to Top