মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন হাফি.। বাংলদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ন মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি। মোদী বিরোধী আন্দোলনে সম্মুখসাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই দীর্ঘদিন থেকে এসেছেন ইউসুফি পাঠশালায়। কারাগারের এই দীর্ঘ জার্নির গল্প পাঠকদের জানাচ্ছেন মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ ও জাবের আল হুসাইন। -সম্পাদক
স্মারক: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আতাউল্লাহ আমীন: ওয়াআলাই আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
স্মারক: শুরুতেই গ্রেফতার হওয়ার পূর্বের প্রেক্ষাপটটা জানতে চাই!
আতাউল্লাহ আমীন: ২০২১ সালের মার্চ মাসের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আমন্ত্রিত হয়ে আসে। তার আমন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই এক ধরনের উত্তেজনা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি না দিলেও দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দ্বীনদার মানুষ, ভারতীয় মুসলমানদের উপর নির্যাতনকারী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকে চিহ্নিত করে। হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী দলগুলোর কর্মসূচি না থাকলেও ২৬ শে মার্চ শুক্রবার পরিকল্পিতভাবে মুসল্লিদের উপর হামলা শুরু হয়। এই হামলা বাইতুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি বাহিনী সরকারি দলের লোকজন হামলা করে। এই হামলাকে কেন্দ্র করেই হাটহাজারী ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে চারজন দ্বীনি ভাইয়ের শাহাদাতের খবর আসে, তার প্রেক্ষিতেই ২৮ শে মার্চ হরতালের ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। যদিও হেফাজতে ইসলামের কোন কর্মসূচি ছিল না; কিন্তু ইসলাম প্রিয় মানুষ মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে হত্যার প্রতিবাদে হরতালের কর্মসূচি দেয় এই হরতালকে কেন্দ্র করেই মূলত সরকার আলেম-ওলামাদেরকে গ্রেফতার বা বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করার উদ্যোগ নেয়। এই হরতালের পর ও ভালোই ছিল; কিন্তু কোথায় যেন একটু প্রবলেম হয়েছে, অন্য কোনো একটা গ্রুপ আমাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। যে কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ব্যাপক সহিংসতা হয় । সেখানকার সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের লোকজনের ভিতরকার আভ্যন্তরীণ কোন্দল এটার জন্য বড় দায়ী ছিল। যাই হোক সরকারের একটি মহল এসব কিছুর দায় হেফাজত নেতৃবৃন্দের উপর চাপায়। এক পর্যায়ে সরকার রমজানের একদিন আগে থেকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আলেম উলামাদেরকে গ্রেফতার শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ই এপ্রিল আমাদের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সাহেব গ্রেফতার হন। তার একদিন আগে জালাল উদ্দিন আহমাদ সাহেব, মাওলানা কোরবান আলী সাহেব, বিশ তারিখে আমি গ্রেফতার হই। আমার পর মাওলানা শরাফত হোসাইন, মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী, ইউসুফ আশরাফ ভাইসহ আমাদের সংগঠনের সারা দেশের বেশ কিছু দায়িত্বশীল নেতা কর্মী গ্রেফতার হয়। এভাবেই একটা গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। গ্রেফতার চলতে থাকে। সারা দেশের আলেম-ওলামা ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই ছিল প্রেক্ষাপট।
স্মারক: হেফাজতের দায়িত্বশীল পর্যায়ের সবাই তো প্রায় গ্রেফতার হয়ে গিয়েছিলেন। এ অবস্থায় মামলা কিভাবে চলেছে?
আতাউল্লাহ আমীন: হেফাজতের দায়িত্বশীল পর্যায়ের অনেক নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হয়েছেন। শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে গ্রেফতার না হলেও মাঠ পর্যায়ের যে সকল দায়িত্বশীল ছিলেন, তাদের প্রায় সকলেই গ্রেফতার হয়েছেন। মামলা-মুকাদ্দমা ম্যাক্সিমাম দায়িত্বশীলদেরই ব্যক্তিগত পর্যায়েই মামলাগুলো পরিচালনা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দায়িত্বশীলদের সাংগঠনিক একটা উদ্যোগ ছিল মামলাগুলো পরিচালনা করা পারিবারিক খোঁজ খবর রাখা। এই উদ্যোগগুলোর সাথে আমাদের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ভাইয়েরা বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছেন। সর্বোপরি মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবার অন্যসব দায়িত্বশীলদের বিশেষভাবে প্রায় সকল দায়িত্বশীলদের মামলা পরিবার পরিচালনা করছেন। আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একটা টিম প্রায় সকল দলের নেতাকর্মীদের যারা গ্রেফতার হয়েছিল, তাদের পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করে মামলাগুলো পরিচালনা করেছে। এভাবে মামলাগুলো পরিচালিত হয়েছে।
স্মারক: গ্রেফতারের পর প্রাথমিক অনুভূতি কেমন ছিল?
আতাউল্লাহ আমীন: আমি গ্রেফতার হই, ২০২১ সালের ২০ এপ্রিলÑ আমাকে গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাবের যে টিম আমাকে গ্রেফতার করে, তারা জামিয়া রাহমানিয়া থেকে রাত বারোটার পর আমাকে গ্রেফতার করে। প্রথম যখন গ্রেফতার করতে আসে স্বাভাবিকভাবেই আমার মধ্যে ভয় কাজ করছিল। তারা যখন আমাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে উঠায়, তখন আমার মধ্যে একটা অনুভূতি কাজ করে, যে আল্লাহর দ্বীনের জন্য গ্রেফতার হয়েছি, এটা আমার সৌভাগ্য। দ্বীনের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি যখনই এই অনুভূতিটা আমার মধ্যে আসলো, আমি তখন মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ ক্রস করতেছি। আমাকে তো গ্রেফতার করে নিয়ে আসছে র্যাব ২ এর অফিসে বেড়িবাধ ক্রস করার সময় দিলের মধ্যে এ অনুভূতিটা আসে যে দিনের জন্য, আমি গ্রেফতার হয়েছি এর জন্য ভয় কিংবা কষ্টের কিছু নেই। যতদিন জেলখানায় ছিলাম এই অনুভূতিটা আমার মধ্যে ছিল, আল্লাহর দ্বীনের জন্য আমার এ সময়টা এই কুরবানীটা হচ্ছে ইনশাল্লাহ এটার আজর এটার প্রতিদান আল্লাহ আমাকে দিবেন। এই আশাটা থাকার কারণে কখনো নিজের মধ্যে হতাশা এবং নিরাশা আসে নাই।
স্মারক: যতটুকু জানি, আপনি দীর্ঘ একটা সময় মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক সাহেবের সাহচর্য পেয়েছেন কারাগারে। হুজুরকে কেমন পেয়েছেন? হুজুরের সময় কিভাবে কাটছে?
আতাউল্লাহ আমীন: আমি কারাগারে গ্রেফতার হওয়ার পরে ,দীর্ঘ একটা সময় বিভিন্ন থানায় আমার রিমান্ড হয়। রিমান্ডের পরে ,ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে আমরা কাশিমপুর কারাগারে যাই। কাশিমপুর কারাগারে প্রাথমিক সময়টা মামুন ভাই একজায়গায় ছিল, আমি ভিন্ন জায়গায় ছিলাম। পরবর্তীতে মামুন সাহেবকে ১৮ দিনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ। আমাকে নিয়ে যায় শাহবাগ থানায় । শাহবাগ থানার রিমান্ড শেষে কোর্ট হয়ে আমি চলে যাই কেরানীগঞ্জ। মামুন সাহেব রিমান্ড শেষে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি চলে যায়। কুরবানীর সাত আটদিন আগে আমাদেরকে আবার কাশিমপুর হাইসিকিউরিটিতে পাঠায়। কুরবানীর ঈদ থেকে নিয়ে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত আমরা একই রুমে ছিলাম। অথচ এরমধ্যে বিভিন্ন সময় মামুন ভাই খুলনা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলে থাকেন। আমারও এরমধ্যে প্রায় দুইমাস, অর্থাৎ গত রমজানের লম্বা একটা সময় আমিও নারায়ণগঞ্জ জেলে থাকি। ঈদুল ফিতরের পনেরো দিন পরে আমি আবারও কাশিমপুর আসি এভারেজে মামুন ভাইয়ের সাথে আমার প্রায় তেরো চৌদ্দ মাস একসঙ্গে একই রুমে থাকা হয়েছে। জেলখানার এই সময়টাতে মামুন ভাই এবং আমরা নিজেদেরকে গঠন করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিছু আমলি মেহনত আল্লাহর সাথে তাআল্লুক মাআল্লাহ বৃদ্ধি করার কিছু কাজ সেখানে হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। মামুন ভাইয়ের জেলখানার সময়টা তিনি অত্যন্ত বিন্যস্তভাবে কাটান। দিনের লম্বা একটা সময় নামাজে কুরআন তেলাওয়াত করেন। জিকির আজকার করেন । কিছু মা’মুলাতের মধ্যে কাটান। আরেকটা কাজ হয়েছে, এই দেশের মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াতটা পূর্ণাঙ্গভাবে পৌঁছানোর কাজটা কিভাবে করা যায় এইজন্য আমরা কিছু চিন্তা ভাবনা এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের ভিতরে আমরা যারা ছিলাম একাধিকবার বিভিন্ন ধরনের মতবিনিময় হয়েছে। আগামী দিনে কিভাবে কাজ হবে, বিশ্ব পরিস্থিতি দেশের পরিস্থিতি বর্তমানে প্রচলিত যে রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলো আছে এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ইসলামের আদর্শকে মানুষের সামনে তুলে ধরার পথ এবং পদ্ধতি কি হবে, এগুলো নিয়েও সুদীর্ঘ আলাপ আলোচনা নিজেদের মধ্যে হয়েছে। আমরা বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী আন্দোলন ইসলামী রাজনীতি নিয়েও কিছু পড়াশোনা করার সুযোগও পেয়েছি। বর্তমান কর্মপদ্ধতি কিভাবে হবে, কোন পদ্ধতিতে মানুষের সামনে ইসলামের কথা বলা যায়, ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থায় মানুষকে কিভাবে অভ্যস্ত করা যায়, এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মতবিনিময় হয়েছে। এককথায় কারাগারের শত কষ্টের মাঝেও একটা সুন্দর সময় আমরা একসাথে অতিবাহিত করেছি। মামুনুল হক সাহেবের সাথে আসলে অনেক আগে থেকেই আমরা একসাথে চলাফেরা করি। উনি আমার একটু সিনিয়র হলেও আমরা একেবারেই খোলামেলাভাবে একজন আরেকজনের সাথে চলাফেরা করেছি। বাস্তব কথা হলো, জেলখানায় একসাথে অনেক মানুষ থাকার সময় যে একটা অবস্থা ছিল, এখন মামুনুল হক সাহেবের মানসিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক কষ্টকর। দীর্ঘ একটা সময় আমি মামুন ভাই একই রুমে ছিলাম একজনের রুমের সহযোগিতা আরেকজনকে করেছি। এখন উনি একা এক রুমে একা থাকাটা অনেক কষ্টকর, এই অবস্থায় আসলে মামুন ভাইয়ের দ্রুত মুক্তি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন পথ নাই। দোয়া করি যেন আল্লাহ দ্রুত মামুন ভাইকে মুক্তি দিয়ে দেন।
স্মারক: রাজনৈতিক মামলায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এত দীর্ঘ সময় কখনো জেলে থাকে না। আপনাদের ক্ষেত্রে এত দেরী হলো কেন?
আতাউল্লাহ আমীন: রাজনৈতিক মামলায় এত দীর্ঘ সময় থাকে না, এই কথাটা সঠিক না। বাংলাদেশে এখনো রাজনীতিবীদদের মধ্যে একটা বড় অংশ যারা ১০ বছর, ১১ বছর, সাত, আট বছর ধরে জেলে আছে। হ্যাঁ ইসলামী নেতৃবৃন্দ, বিশেষভাবে আমাদের ঘরানার আলেম-ওলামাদের এত লম্বা সময় কারাগারে থাকার থাকার নজির নেই। স্বাধীনতা উত্তর এই বাংলাদেশে আলেম-ওলামাদের এত দীর্ঘ সময় কারাবরণ, জেলখাটার কারণ হলো, সরকার দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আছে, যে কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের একটা বেপরোয়া ভাব চলে এসেছে। তাদের জবাবদিহিতার জায়গাটা নাই, যে কারণে তারা যে কাউকে যখন ইচ্ছা করলে গ্রেফতার করে রাখতে পারে। বিরোধী দল আসলে কার্যকরী বিরোধী দলও তো বাংলাদেশে নাই, যে কারণে তাদের যে কাউকে দীর্ঘ সময় জেলে রাখাটা তাদের জন্য খুব কষ্টকর হয় না। আমার মনে হয় যেহেতু সরকার মনে করে তাকে জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে এমন কোন শক্তি নাই, সে কারণেই মূলত আমাদের অনেক লম্বা সময় লেগে গেছে। আর বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতা হলো সারা পৃথিবীতে সকলেরই মানবাধিকার আছে, সকলেরই মানুষ হিসেবে তার যেই পাওনা তার যেই অধিকার এগুলোর জন্য কথা বলার মতো লোক আছে। যখনই কোন মুসলমান দাঁড়ি- টুপিওয়ালা মুসলমান হয় আর সে যদি আলেম-ওলামা হয় তাহলে আর তাদের বিষয়ে মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আপনারা দেখেছেন আমাদের পরপরই বাংলাদেশের একজন অভিনেত্রী গ্রেফতার হয়েছিল । তার বিষয়ে দেশের সুশীল সমাজ দেশের বুদ্ধিজীবীরা তথাকথিত মানবতাবাদীরা যেভাবে তার পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল। একই ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার ট্রায়াল হয়েছে মামুনুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে । মামুনুল হক সাহেব এর পক্ষে সুশীল সমাজ বলেন, বুদ্ধিজীবী বলেন, কেউ কিন্তু কোন কথা বলে নাই বিষয়টা হলো পৃথিবীর মধ্যে বর্তমানে এটা বাস্তব কথা হলো সবচেয়ে বড় নির্যাতিত সংখ্যালঘু হচ্ছে প্র্যাকটিসিং মুসলমান অর্থাৎ যারা মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের আদর্শকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করে ইসলামকে, যারা নিজেদের ব্যক্তি ও সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চায়,তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্যাতিত সংখ্যালঘু। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পক্ষে মানুষ কথা বলে আমাদের পক্ষে কথাও বলে না। এটাই এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এসব বাস্তবতার কারণে আমাদের বেশি সময় লেগেছে।
স্মারক: কারাগারে যাওয়ার আগের জীবন আর পরের জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করেন?
আতাউল্লাহ আমীন: কারাগারের আগের জীবন আর পরের জীবনের মধ্যে পার্থক্য কিছুটা আছে। একটা দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার কারণে সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।কারাগারটা তো আসলে এক ধরনের কবরের মতো। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কারাগারে থাকতে হয়। যে কেউ, বিশেষ করে দ্বীনদার মানুষ যখন কারাগারে থাকে, তখন তাদের মধ্যে একটি অনুভূতি আসে যে, আমি কারাগারে থেকে কেমন যেন পৃথিবীর বাইরে আছি। স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা মৃত্যুর ভয় কবরের ভয় কারাগারের মধ্যে আসে। আল্লাহর সাথে তাআল্লুক মাআল্লাহটা বৃদ্ধি পায়। এই একটা অনুভূতি ভিতরে জাগ্রত ছিল, কিন্তু বাহিরে এসে বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে সেই অনুভূতিটার তেজ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আসলে দ্বিনি আন্দোলন যারা করবে তাদের আল্লাহর সাথে গভীর তাআল্লুকের যে বিষয়টা এটার ব্যাপক চর্চা হওয়া দরকার। এখন দৃঢ়ভাবে মনে হচ্ছে যে আল্লাহর সাথে গভীর তাআল্লুক ছাড়া দ্বীনি আন্দোলন সফল হবে না! এই অনুভূতিটা যেন সদাসর্বদা জাগ্রত থাকে! আপনাদের কাছেও দোয়া চাই!
স্মারক: খেলাফত ছাত্র মজলিসের জনশক্তিদের জন্য…
আতাউল্লাহ আমীন: ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীলদের প্রতি আমার অনুরোধ, দ্বীন কায়েম যেন মাকসাদ হয়। সংগঠন কিংবা দল, এটা দ্বীন কায়েমের মাধ্যম। কখনো দলপ্রীতিটা এতো বেশি বেড়ে যায় যে এটা দ্বীন কায়েমের মাকসাদ থেকেও দল কায়েমের মাকসাদটা প্রবল হয়ে যায়। আমি ছাত্র ভাইদের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং অনুরোধ থাকবে সংগঠনের প্রতি দায়বোধ থাকা ভালো, সংগঠনের সাংগঠনিক সিস্টেমটাকে মেনে সংগঠনটাকে অগ্রসর করার চিন্তাটা অনেক ভালো, তবে সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে সংগঠন দ্বীন কায়েমের মাধ্যম। ছাত্র ভাইদেরকে বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে এক প্লাটফর্মে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এই সংগঠনকে। নিজেরা বাহ্যিকভাবে একটু ছোট হয়ে হলেও বৃহত্তর প্লাটফর্ম গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা দরকার। নিজেরা কুরবানী করে, ছাড় দিয়ে হলেও,বড় প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য, কাজের স্পেসটাকে আরো মসৃণ করার জন্য, ও প্রশ্নগুলো কমানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার দায়িত্ব, এই ছাত্র সংগঠন নিবে আমি ছাত্র ভাইদের কাছে এই প্রত্যাশা করি!