কেন্দ্রীয় সম্মেলন’২৩ এর ঘোষণাপত্র

১. মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হকসহ সকল মজলুম কারাবন্দীর মুক্তি দিতে হবে
এ দেশের আলেমসমাজের উপরে যেভাবে জুলুম নিপীড়ন এবং হয়রানি চলছে, স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে একদিকে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের যোগ্য দক্ষ উস্তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপর দিকে সেসকল উস্তাদদের অবর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি অগ্রগতি ও শিক্ষা কার্যক্রম প্রতিনিয়ত ব্যহত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস কওমি মাদ্রাসাগুলোর সুন্দর সুষ্ঠু পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা মনির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা হারুন ইজহারসহ কারাবন্দী আলেমদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।

২. দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিতকরন ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীনি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে দ্বীনি শিক্ষার অভাবে আজ সমাজের উচ্চ শিক্ষিত ছাত্রদের থেকে অনৈতিক নানা অপকর্ম প্রকাশ পাচ্ছে। সেসব শিক্ষিত সন্তানের হাতেই খুন হচ্ছে পিতা মাতা। শিক্ষার অভাবে ছিন্নমূল শিশুরা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে । এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠেছে কিশোরগ্যাং। স্বাধীনতা পরবর্তী অভিবাসী বিহারী, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য অভিবাসীরা আজ শিক্ষাহীন নৈতিকতা বিবর্জিত জীবনযাপন করছে।
তাই বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত ও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বীনি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি কলেজ ভার্সিটিগুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. দাফতরিক সম্পর্কবিহীন সরকারী হস্তক্ষেপমুক্ত হাইয়াতুল উলয়ার সরকারী মান কার্যত বাস্তবায়ন করতে হবে
বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে কওমি মাদ্রাসাগুলো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দীর্ঘদিন যাবত এই মাদ্রাসাগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহমাতুল্লাহ আলাইহ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে শায়খুল ইসলাম শাহ আহমদ শফি রহমাতুল্লাহ আলাইহের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আসলেও এই স্বীকৃতির কোন কার্যকারিতা নেই। বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস সরকারের কাছে দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছে, হাইয়াতুল উলয়ার সার্টিফিকেটের সরকারি মান সর্বক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে।

৪. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২২ ও পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুত্ববাদের অন্তর্ভুক্তি বাতিল করে শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী ভাবধারার বিষয় সংযোজন করতে হবে এবং বাধ্যতামূলকভাবে ধর্মীয় শিক্ষাকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করতে হবে

শিক্ষা মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। একজন মুসলমানের জন্য ধর্মশিক্ষা তার মৌলিক অধিকার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শিক্ষানীতি দিন দিন ধর্মহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধর্মশিক্ষাকে সম্পূর্ণ সংকুচিত করে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার নামে প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে কোমলমতি শিশুকিশোর মনে যেভাবে যৌন সুড়সুড়ি উস্কে দেওয়া হচ্ছে, এর পরিণাম নিয়ে আমরা যারপরনাই উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে এসব বন্ধ করতে হবে।

৫. কাগজ, কলম, বইসহ সকল শিক্ষা উপকরণের মূল্য কমাতে হবে
আজ আমরা লক্ষ্য করছি, পরিকল্পিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। প্রতিশ্রুত বিনামূল্যে বিতরণের বই সুষ্ঠু বণ্টন হচ্ছে না। বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে, বিনামূল্যে বিতরণের বই সুষ্ঠুভাবে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সকল প্রকার ভ্যাট প্রত্যাহার করে শিক্ষাক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে কাগজ, কলম, বইসহ সকল শিক্ষা উপকরণের মূল্য হ্রাস করতে হবে।

৬. নারীদের পূর্ণ নিরাপত্তার লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র পৃথক নারী শিক্ষালয় স্থাপন করতে হবে
আজ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সহশিক্ষার কুপ্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিক্ষার মনোরম পরিবেশ অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার ভয়াল গ্রাসে বিপর্যস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস মনে করে, নারীসমাজের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা ও সামাজিক নিরাপত্তা সুসংহত হতে পারে। তাই বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছে।

৭. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করতে হবে
আজকের এ সম্মেলন গভীর উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা দাড়ি, টুপিওয়ালা, হিজাব পরিহিতা শিক্ষার্থীদের হয়রানির মাত্রা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় পোশাক পরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে, অবিলম্বে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করে পড়াশোনার পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে হবে।

ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন সংঠনের সভাপতি পরিষদ সদস্য মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন

৮. শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধ করে মানসম্পন্ন শিক্ষারব্যবস্থা করতে হবে
আজ কিছু সংখ্যক মানুষ শিক্ষার মত মহান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পণ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। মানহীন শিক্ষা আজ জাতির শিক্ষিত বেকারের তালিকা বৃদ্ধি করছে। তাই বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে, শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করে মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. পরীক্ষায় অনিয়ম, নিয়োগ দুর্নীতি বন্ধ করে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে
আজ পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগেই বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। নিয়োগ পরীক্ষা নামক সাজানো নাটকের শেষ হাসিটা ঘুষ দেয়া দুর্নীতিবাজ অযোগ্য মেধাহীন মুখেই ফোটে। তাই বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে, পরীক্ষায় অনিয়ম, নিয়োগ দুর্নীতি বন্ধ করে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

১০. নৈতিকতা বিবর্জিত, ইসলামবিরোধী উস্কানীমূলক সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করে সুস্থ, নৈতিক মূল্যবোধসস্পন্ন সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে
আজ সংস্কৃতি চর্চার নামে পরকীয়া, অবৈধ প্রেম ভালোবাসাসহ বিজাতীয় কালচার, ভারতীয় চ্যানেলের ছয়লাবে নীতি নৈতিকতা হারাচ্ছে ছাত্র ও যুব সমাজ। বিভিন্ন মঞ্চ নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে দাড়ি, টুপি, বোরকাসহ ইসলামী নিদর্শনসমূহকে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস আজকের এই সম্মেলন থেকে দাবি জানাচ্ছে- নৈতিকতা বিবর্জিত, ইসলামবিরোধী উস্কানীমূলক সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করে সুস্থ, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে।

১১. মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা ও দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে
আজকে এ সম্মেলনে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সে দেশের সরকার, সেনাবাহিনী ও সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যুগযুগ ধরে জাতিগত দমন পীড়ন, গণহত্যা ও বর্বরতা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ ঘর-বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয়ের জন্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মিয়ানমারের এহেন জাতিগত নির্মূল অভিযান, ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া, হত্যা, ধর্ষন এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। আজকের এ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে এ বর্বরোচিত হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সাম্প্রদায়কে যথাযথ ভূমিকা পালনের জোর দাবি জানাচ্ছে।
একই সাথে বাংলাদেশে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা মুসলমানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে রাখার জোর দাবী জানাচ্ছে। একই সাথে এ সম্মেলন থেকে আলেপ্পোসহ সিরিয়ার বিভিন্ন স্থান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেনে চলমান সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় উত্তোরণের দাবী জানাচ্ছে এবং ফিলিস্তিন, কাশ্মীরসহ বিভিন্ন মুসলিম জনপদে ইহুদীবাদী ও আধিপত্যবাদী আগ্রাসন বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছে।

১২. মুসলমানদের এ দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের নামে তাওহীদবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে
কথিত সংস্কৃতির নামে দেশি-ভিনদেশি কোন মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করা যাবেনা। ভাস্কর্য স্থাপন ৯০ শতাংশ মুসলমানদের চেতনা ও সংস্কৃতি বিরোধী কাজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ রাষ্ট্রে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। তাই আজকের সম্মেলন থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের এ দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের নামে তাওহীদবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।

১৩. খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে
বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মানবরচিত মতবাদসমূহ মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি দিতে বারংবার ব্যর্থ হয়েছে। তাই সারা বিশ্বে আজ মুক্তিকামী মানুষ নিজেদের আশ্রয়স্থল হিসেবে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গ্রহণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস এ সম্মেলন থেকে ঘোষণা করছে যে, বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষকে এক কাতারে এনে রাষ্ট্রব্যবস্থায় দ্বীনকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করা হবে।

১৪. ছাত্র ও তরুণ সমাজে প্রশিক্ষণ নির্ভর সুষ্ঠু ধারার ইসলামী সংগঠনের চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে
ছাত্র তরুণ সমাজ নৈতিকতা বিবর্জিত, ক্ষমতার বাহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। যুগ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাকওয়াভিত্তিক যোগ্য নেতৃত্ব গড়া অপরিহার্য। তরুণ প্রজন্মকে আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সময়ের এই অনিবার্য দাবি পূরণে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস কাজ করে যাচ্ছে।
আজকের এ সম্মেলন ছাত্র, সমাজ ও দেশের দায়িত্ববান সকল নাগরিককে এ আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহবান জানাচ্ছে।

Scroll to Top
Scroll to Top